আজ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গুইমারায় পায়েল হত্যার ঘাতকদের ফাঁসীর দাবিদে সংবাদ সম্মেলন

নুরুল আলম:: খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক নামক এলাকায় গত বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ মেহেদী হাসান পায়েল নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল দিয়ে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে ঘাতকদের ফাঁসীর দাবি করে বুধবার ১ মে ২০২৪ গুইমারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পায়েল এর পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসী। এসময় বিস্তারিত বলতে গিয়ে ছেলে হারানো যন্ত্রনায় আবেগ্লাপুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন পায়েল এর মা।

সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান পায়েল এর বড় ভাই রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ঈদের দিন সকালে নামাজ পরে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মোটর সাইকেলযোগে ৫ নম্বরের দিকে রওনা দিলে কিছুদুর আসার পর অপর প্রান্ত থেকে আসা আজিজুল তাহার মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় ভাওলী মেরে নুর আলমের মোটরসাইকেলে থাকা সবাইকে ভয় দেখায়। এতে নুর আলম ভয় পেয়ে যায় এবং নুর আলমের মোটরসাইকেলটিসহ সকলে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়া পরপরই বাকীরা পুনরায় উঠে গেলেও পায়েল উঠার চেষ্টা করার সময় অপর প্রান্ত থেকে আসা আজিজুল রাস্তার রং সাইডে গিয়ে পায়েলের মাথার উপরে মোটরসাইকেল তুলে দেয় এবং সাথে সাথে আজিজুল, নুর আলমসহ সকলে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। আশেপাশের লোকজন তাদেরকে ডাক দিলেও তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুর্ঘটনা ঘটার পর আজিজুলসহ অন্যান্যরা পায়েলকে উদ্ধার না করে ঘটানাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তারা আরো বলেন, আজিজুল ইচ্ছা করলেই পায়েলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতো। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেন তারা।

পায়েল এর আরেক বড় ভাই মো: সোহেল জানায়, ঘটনাস্থলে পায়েলকে ফেলে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আজিজুল ও নুর আলম আজিজুল এর বোন জামাই আল-আমিন রনির কাছে গিয়ে আশ্রয় চাইলে রনি তাদের কিছুদিনের জন্য পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলে তোদের কিছুই হবে না। আমি ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে সব সমাধান করে দিব। থানার ওসির সাথে কথা বলবো, দরকার হলে এসপির সাথেও কথা বলে ডিল করবো।

জানা যায়, মোঃ আল-আমিন রনি সাংবাদিক পরিচয়ে দিয়ে এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরী করে বিভিন্ন মানুষকে হুমনি-ধামকি দিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও চাঁদাবাজি করে আসছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি উন্নয়ন মূলক কাজ থেকে নানান অযুহাতে চাঁদাদাবি করে এই কথিত নামধারী সাংবাদিক আল আমিন রনি। এর মদদেই এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

পায়েল এর বড়ভাই সোহেল আরো বলেন, পায়েলের লাশ দাফন করার পরের দিন আল-আমিন দমক দিয়ে বলে, মামলা মোকাদ্দমা করে কিছুই হবে না, এখানে মিমাংসা করে ফেল। না হয় এক ভাই হারাইছো, তোমাদেরও সমস্যা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় পায়েলের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে বলে জানায় ভুক্তভোগিরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানায়, ঈদের নামাজ শেষ করে কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে হঠাৎ পায়েল যে গাড়িতে ছিল সেই গাড়িটি রাস্তায় থাকা বালুর কারনে পড়ে যায়। পরে গিয়ে গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা সামান্য আঘাত পাওয়া অবস্থায় তারা একে একে উঠতে থাকাকালীন অপর প্রান্ত থেকে আসা আজিজুল ইসলাম এসে পায়েলের মাথার উপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘটনা গুরুতর দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে আমিসহ বেশ কয়েকজন পায়েলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।

প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ মনির হোসেন বলেন, নামাজ পরে বাসায় যাওয়ার পথে আজিজুল মোটরসাইকেল দিয়ে অপরপ্রান্ত থেকে আসা নুর আলমের গাড়িকে ভয় দেখালে গাড়িটি সেখানে পরে গিয়ে যাত্রী সবাই নিচে পরে গেলে আজিজুল তার মোটরসাইকেলটি নুর আলমের গাড়িতে থাকা পায়েল এর মাথার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এতে পায়েল গুরুত্বর আহত হলে আজিজসহ বাকীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

মৃত পায়েল এর শশুর ওসমান গণি বলেন, পায়েলকে বাচাঁনের জন্য সর্বচ্চো চেষ্ট আমি করেছি কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে না পেরে লাশ নিয়ে বাসা আশার পর স্থানীয় কথিত সাংবাদিক নামধারী ঘাতকের বোন জামাই আল আমিন রনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে অর্থের বিনিময়ে মিমাংশার প্রলোভন ও বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।

ঘটনার বিবরণে নুর আলমের গাড়িতে থাকা তাওহীদুর রহমান বলেন, ঈদের দিন সকালে নামাজ শেষে মোটরসাইকেল দিয়ে কবর জিয়ারত করার জন্য যাওয়ার পথে অপর প্রান্ত থেকে রং সাইড দিয়ে আসা আজিজুল ইসলাম আমাদের গাড়িকে ভয় দেখিয়ে ফেলে দিলে আমরাও গাড়ি থেকে পরে সামান্য আহত হই। পরক্ষণেই আজিজুল এসে পায়েল এর মাথার উপর দিয়ে মোটরসাইকেলটি চালিয়ে পায়েলকে মারত্মক ভাবে আহত করে। অবস্থা গুরুত্বর দেখে ঘটনাস্থলে পায়েলকে আহত অবস্থায় রেখেই আজিজুল ও নুর আলম পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আজিজুল চাইলেই পায়েলকে বাঁচাতে পারতো কিন্তু সে তা না করে নিজে বাঁচার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

অর্থের বিনিময়ে মিমাংশা ও পরিকল্পিত হত্যার সাথে জরিতের বিষয়ে আজিজুল ইসলাম এর বোন জামাই আল-আমিন রনির সাথে যোগাযোগ করার জন্য মুটোফোনে কল করলে, তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করে বলেন তার স্বামী বাহিরে গেছে। এর পর কয়েকবার ফোন করলেও তা আর রিসিভ করেননি।

Share

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page