আজ ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান শিক্ষকহীন মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাঠদান ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার উপকণ্ঠে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়”। মাধ্যমিক পর্যায় উপজেলায় একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি।

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্যতা, অবকাঠামোগত অনুন্নত, শিক্ষক সল্পতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যেখানে ডিজিটাল গন্ডি পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পন করছে, সেখানে পরিদ্যক্ত কক্ষে পাঠদান চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নে অবগকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রধান শিক্ষক ও বিষয় ভিত্তিক পদ শূন্য, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কুলে শিক্ষার্থী আসন ও শাখা বাড়ানোর দাবি অভিভাবদের।

সরজমিনে দেখা যায়, ১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলো পরিণত হয়েছে ভুতের বাড়িতে। দেখলে শরীর ছমছম করে উঠে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে সহকারী শিক্ষক দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আশির দশকে নির্মিত জরাজীর্ণ অবকাঠামোতে চলছে দৈনন্দিন কার্যক্রম। দপ্তরিক কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দেওয়া টিনসেট কক্ষে।

দীর্ঘদিন মেরামতহীন মেঝেতে রয়েছে ফাটল ও অসংখ্য গর্ত । অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠদান চলছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণে শিক্ষকরা লাভবান হলেও অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ধুলায় মিশে যাচ্ছে অভিভাককদের স্বপ্ন। হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৯.৭৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাটিরাঙ্গা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নাম ও সরকারি করণ করা হয়। সে মোতাবেক ২৮ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক রয়েছে ৯ জন কর্মচারী রয়েছে ৮ জনের স্থলে ৫জন । কোটা থাকলেও নেই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর। পাশাপাশি কারিগরি (ভোকেশনাল ) শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দুটি ট্রেড কোর্চ ( ইলিট্রেশিয়ান ও পারমেশিনারী) দর জন্য নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ব্যবহারিক পাঠদানে প্রযুক্তিগত উপকরণ না থাকায় চরমভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

অপর দিকে সভা সেমিনার জন্য অডিটোরিয়াম, মান সম্মত লাইব্রেরি, আধুনিকমানের একাডেমিক ভবন, শ্রেণী ভিত্তিক পাঠদানে বিজ্ঞান ভবন নেই। চারদিকে সীমানা প্রাচীর ও মান সম্মত গেইট না থাকায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে স্কুলের জায়গা এবং প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর নেশার আড্ডা বসারও অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থী অভিভাক আলী হোসেন বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে যে মানের একাডেমিক ভবন থাকার কথা সেভাবে ভবন নেই। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকের পদ শূন্যতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারিকরণের ফলে আসন স্বল্পতার কারণে অনেকেই ভর্তি সুযোগ পায়না। তাই শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী আসন বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

অভিভাবক আবুল হাসেম জানান, বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিনের হলেও অবকাঠামো ঠিক নেই। প্রধান শিক্ষকসহ পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। সব মিলিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানান তিনি।

আরেক অভিভাবক বেলাল হোসেন বলেন, শিক্ষক স্বল্পতায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশ অনেক নড়বড়ে অবস্থা। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালেয়ে পাঠদান চলছে। তাছাড়াও রাত্রিকালীন বিভিন্ন নেশা গ্রস্থ্যরা এখানে আড্ডার জমায়। এ সমস্ত হতে উত্তরণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সাল থেকে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। রয়েছে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট। ২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিভাকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নামমাত্র বেতনে ৩ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন স্কুল সরকারিকরণ করা হয়ে হেয়েছে। নিয়মানুয়ী শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, মাটিরাঙ্গা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় যে কয়জন শিক্ষক নিয়ে জাতীয় করণ করা হয়েছে, সে কয়টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে যে পদগুলো বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সৃষ্টি লক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্যাধি প্রেরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় বব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান শিক্ষক ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ এবং শাখা ভিত্তিক শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে আরো বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি স্থানীয়দের।

Share

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page