নিজস্ব প্রতিবেদক:: পার্বত্যাঞ্চলকে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি আখ্যায়িত করা হলে সে পাহাড় এখন অনিরাপদ দুষ্টচক্রের ধ্বংসের মুখে।
পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড় আর ফসলি জমিকে টার্গেট করে নিজেদের স্বর্গরাজ্য তৈরি করছে এ চক্রটি। তাদের অবৈধ কাজের মহাৎসব এর কাছে যেন সবাই অসহায়। এই তালিকায় পিছিয়ে নেই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল।
একের পর এক ছোট বড় পাহাড় কেটে বিলীন করে দিচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের সৌন্দর্য্যের রানীকে। শুধু পাহাড় নয় ফসলী জমি থেকে মাটি উত্তোলন, পুকুর খননের নামে মাটি উত্তোলনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের নামে এসব মাটি কেটে বিক্রয় করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজে ও ইটভাটা গুলোতে। এসব অবৈধ কাজের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারায় বড়পিলাক ৫ নাম্বার নামক এলাকায় দিনে দুপুরে অন্যের জায়গার পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যক্তির নামে। বিরোধকৃত জায়গায় রাস্তা বানানো ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য পাহাড় কেটে সাবাড় করলেও দেখার কেউ নেই।
এই নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ রাত আনুমানিক ৮টায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ৯৯৯ এ ফোন দিলে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনো কোনো সুরহা দেয়নি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা।
ভুক্তভোগিরা জানায়, জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলছিলো। জায়গা ম্যাপে দুই পক্ষকে বুজে নেওয়ার কথা থাকলেও আর্থিক সমস্যার কারণে মাপা হয়নি। যার ফলে ঐভাবেই পড়েছিলো জায়গাটি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী রাতের আধাঁরে কাউকে না জানিয়ে পাহাড় কাটতে থাকে আল আমিন রনি।
পাহাড় কাটার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুই পক্ষকে থানায় যাওয়ার জন্য বললেও পাহাড় খেকোরা না গিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে আল-আমিন রনির সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার দুইটি নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও সংযোগ প্রদান করেনি। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া গেছে, গুইমারার জালিয়াপাড়া, হাফছড়ি, তৈর্কমা, সিন্দুকছড়ি, আমতলীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খননের নামে মাটি বিক্রয়ে মেতে উঠেছে একটি চক্র।
সূত্র জানায়, এসকল মাটি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও ইটভাটা বিক্রয় করা হয়। প্রতি ট্রাক ১ হাজার ৫শত থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রয় হয় এসকল মাটি। যত্রতত্র মাটি কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের মহাযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে চক্রটি। বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের দোহাই দিয়েই এসব অবৈধ কাজ করে থাকে মহলটি।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানায়, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ হওয়া সত্বেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অর্থের দাপটে নিয়মনীতি অমান্য করেই একের পর এক অবৈধ কাজ করেই যাচ্ছে। আর পাহাড় কাটার মত অপরাধ কাজের পরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
সচেতন মহল জানায়, অনুমতি বিহীন পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বেয়াইনি হওয়া সত্বেও পার্বত্যাঞ্চলে একের পর এক ছোট বড় পাহাড় কেটেই যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারনে পার পেয়ে যাচ্ছে এসব পাহাড় খেকো চক্র। যার ফলে পাহাড়ের সুন্দর্য ও নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য । এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাহাড়ে বসবাস করা সাধারণ মানুষ। যার প্রভাব পরতে পারে আসছে বর্ষার মৌসুমে। তাই এসকল পাহাড় খেকোদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জনান।
গুইমারা থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আরিফুল আমিন জানায়, এখানে যত্রতত্র পাহাড় কাটা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছুটিতে আছেন। ছুটি শেষে উনি আসলে পরামর্শ ও নিদের্শ স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক সহিদুজ্জামান বলেন, অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না। যে বা যারাই পাহাড় কাটুক তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply