নিজস্ব প্রতিবেদক:: রক্তের হলিখেলায় নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। ফলে পাহাড়ে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। আধিপত্য ধরে রাখতে পাহাড়ে চলে রক্তের হলিখেলা। একের পর এক সংঘাতের ফলে পাহাড়ে ঝরছে তাঁজা প্রাণ। এসব অশান্তি আর আধিপত্য ধরে রাখার মুল অস্ত্র বেপরোয়া সে চাঁদাবাজীতে এখন অতিষ্ঠ পাহাড়ের মানুষ। আধিপত্যে অনড় প্রতিটি সংগঠন জুম্ম জাতির আন্দোলনের অজানা জীবনের স্বপ্ন দেখলেও সে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয় মৃত্যুতে।
এসব খুনোখুঁনি,অস্ত্রবাজী,চাঁদাবাজী সবই একই সূত্রে গাঁথা। সব কিছুর মুলই রয়েছে নিজেদের আধিপত্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি,রাঙামাটি,বান্দরবানে বছরে হাজার কোটি টাকার চাঁদাই হচ্ছে সকল অশান্তির মুলে। সবুজ ঘেঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাঁজে ভাঁজে চলে চাঁদাবাজী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী,পুলিশ,আনসার,ব্যাটালিয়ন থেকে শুরু করে নিয়োজিত প্রশাসনের নানা উদ্যোগ,অভিযান,শান্তি-শৃঙ্খলায় সক্রিয় হলেও তারা এখনো অনিয়ন্ত্রীতই রয়ে গেছে। এই সবুজ বেষ্টনীর নীরব পাহাড়ে কতটা নিরাপদ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরতরা,এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় ও সচেতন মহলের।
যেখানে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞেও চাঁদা মাফ নেই কারই। পাহাড়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে,প্রতিটি সেক্টরে চাঁদা অনিবার্য। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। চাঁদা না দিলে এখানে চলে না গাড়ি,হাটে বিক্রি হয়না সবুজ ফসল। কোন ঠিকাদার নিদিষ্ট চাঁদা না দিলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের উন্নয়ন কাজ। যেখানে বর্তমান সময়ে অস্ত্রের ঝনঝনানী,জেলায় জেলায় ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের আধিপত্য আর নিয়ন্ত্রণে এখানে চলে ভারী অস্ত্রের প্রদর্শন,মহড়া। আর অস্ত্রধারীদের হুংকারে ঘুম ভাঙ্গে নিরিহ সাধারন মানুষের।
এখানে সাধারন মানুষ যেন অসহায় এক বোবা প্রাণী। এ মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা নিয়ে চলে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াই। অন্যদিকে হানাহানি,দ্বন্দ্ব,আধিপত্য ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্বার্থের লড়াইয়ে পাহাড়ে চলে রক্তের হলিখেলা। পাশ^বর্তী বন্ধু দেশগুলো অর্থের বিনিময়ে জোগান দিয়ে এসব মরণাস্ত্র। প্রাণঘাতি সে অস্ত্রে পাহাড়কে গড়ে তুলছে আরো বিপদগামী। ফলে পার্বত্য অঞ্চল হয়ে উঠছে অনিয়ন্ত্রনহীন।
স্থানীয় ঠিকাদার,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,বাগানি,কাঁচামাল ব্যবসায়ী,পরিবহণ সেক্টর,জমির মালিক,কৃষি কাজে নিয়োজিত চাষীরাও এখন জিম্মি পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের কাছে। এরপরও তাদের কাছে অসহায় পাহাড়ে নিজ দেশে পরবাসী মানুষগুলো।
স্থানীয়দের প্রশ্ন এ দিনের শেষ হবে কবে? পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি,হত্যাকান্ড,বেপরোয়া চাঁদাবাজী বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি) হলেও সে কাঙ্খিত শান্তি ফিরেনী বলে দাবী জানিয়ে আসছে পাহাড়ে বাঙালিদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতারা।
পার্বত্যাঞ্চলে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এক সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাহাড়ে চলে বাঙালি-পাহাড়ি গণহত্যা থেকে শুরু করে দিনে দুপুরে অপহরণ,অত্যাচার,খুন। পরে সে অরাজকতা থামাতে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি) করে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সাথে।
অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে গড়ে উঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তারপর জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে পাহাড়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এদিকে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার ক্ষোভের মধ্যে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যেও দেখা দেয় বিভাজন। জেএসএস আবার ভেঙে গড়ে ওঠে জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ) জেএসএস সংস্কার।
প্রসিত বিকাশ খীসার দল ভেঙে ২০১৭ সালে ১৫ই নভেম্বর গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি সংগঠন। যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন তপন জ্যোতি বর্মা। পরে পাহাড়ে একের পর এক কয়েক বছরেই বাড়তে থাকে আঞ্চলিক সংগঠনের। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রক্তক্ষরণ আর অশান্তি।
প্রবীন রাজনীতিবিদরা বলেছেন,পাহাড়ে হানাহানি ও রক্তপাতের মুলে আধিপত্য। চাঁদাবাজিকে টার্গেট করে এখানে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ী,ঠিকাদার শ্রেণী থেকে শুরু করে চাকরীজীবি,খাগড়াছড়ি জেলাসহ প্রতিটি উপজেলাগুলোর হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরাও চাঁদা থেকে বাদ পরছে না বলে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব নেতারা।
সচেতন নাগরিকদের দাবী, চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর পরও এখনো অপহরণ,খুন থামেনি। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম রাসেল অপহরণের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো। এছাড়াও মাটিরাঙ্গা,মানিকছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই এসব অপহরণ,গুম,বেপরোয়া চাঁদাবাজি,হত্যাকাণ্ড ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই।
এতো হত্যাকাণ্ডের পরও সুষ্ঠ কোন সমাধান না হওয়ায় ভারী অস্ত্রের বুলেট কেঁড়ে নিচ্ছে পাহাড়ের তরতাঁজা প্রাণ। এসকল হত্যাকাণ্ডে আইনের আশ্রয় চাওয়ার পরও কোন বিচারও মিলেনা পরিবারের পক্ষ থেকে। কারণ এ সব ঘটনার মুল হোতারা থাকেন ধারা-ছোয়ার বাইরে আর কলকাটি নারের অদৃশ্য শক্তি। যা সকলের জানা থাকলেও দৃশ্যত অজানা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব হত্যাযজ্ঞ অনিশ্চিত করতে তুলছে পাহাড়বাসীর শান্তি আর সংঘাতের দিকে ঠেঁলে দিচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে করে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
১৯৯৭ সালের পর থেকে আজকের (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) ৩৬০জন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যার শিকার হয়েছে বলে জানিয়ে ইউপিডিএফ এর সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন,ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যাযজ্ঞ চলছে পাহাড়ে। পাহাড়কে মেধা শুণ্য করতে নিজ জাতির লোকদের ব্যবহার করে পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমানে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার মাধ্যমে রক্তের হলিখেলা চলছে জানিয়ে ষড়যন্ত্রের মুল হোতারা।
এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর হাতে ৩শ ২জন নেতাকর্মী নিহত হয়। এছাড়া এমএন লারমা সমর্থিত জেএসএস এবং পতিপক্ষ মুখোশ বাহিনী সৃষ্টির পর সর্বমোট দু’সংগঠনের যৌথ হামলায় আরো ৫৮ জন নেতাকর্মী শহীদ (আত্ম বলিদান) হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। এ সময় তিনি বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চলছে বলে দাবী করেন তিনি।
এদিকে-ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর সাধারন সম্পাদক মিটন চাকমা বলেন, পাহাড়ে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণকে আধিকার আদায়ের নামে প্রতারণা করে পাহাড়ে সন্ত্রাসী সংঘাতকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে শফিকুল ইসলাম রাসেল অপহরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঙালীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন নিজ দেশে পরবাসী। শত কোটি টাকার চাঁদায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিতে অসহায় পার্বত্যবাসীরা। প্রতিনিয়তই অপহরণ,খুন,চাঁদাবাজির পরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানান।
এদিকে-গুইমারা থানার ওসি মুহাম্মদ আরিফুল আমিন বলেন,সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নয়। সুনিদিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধ পরিকর। যে সকল স্থানে আঞ্চলিক সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ যৌথ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে বলেও এ সময় তিনি জানান।
নতুন করে সংঘাত বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু: প্রসীত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে নতুন করে শুরু হয় সংঘাতের যাত্রা। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি (বুধবার) বেলা ১২টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্লুইস গেট এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় মিঠুন চাকমাকে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে প্রসীত পন্থী ইউপিডিএফ। এর পর থেকে পাল্টাপাল্টি হত্যা-সংঘাতের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় পার্বত্য জেলায় নানা কর্মসূচী-আন্দোলন করে ইউপিডিএফ। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন। তবে সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সংগঠনটি।
শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) হত্যাকান্ড:: হত্যাযজ্ঞের সূত্র ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় ২০১৮ সালের ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি- জেএসএসের (এমএন লারমা) সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করা হয়। তার একদিন পরই শক্তিমানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বেতছড়ি এলাকায় তাদের গাড়িতে অতর্কিতে ‘ব্রাশফায়ার’ করলে খালিয়াজুড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা,জেএসএসের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির (এমএন লারমা) মহালছড়ি শাখার সভাপতি সুজন চাকমা, সদস্য তনয় চাকমা,রবিন চাকমা এবং তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসচালক মো.সজীব এর নির্র্মম মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য প্রসীত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ কে দায়ী করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে এটির নেতৃত্বে আছেন প্রসীত বিকাশ খীসা। তারা একাধিক সাধারণ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর দলটি প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়। দলত্যাগ করা নেতারা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। এতে নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক তপন জ্যোতি বর্মার। সূত্র জানায়,শুরু থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত “তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) ইউপিডিএফ এ যুক্ত ছিলো।
ইউপিডিএফ এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের হত্যা:: ১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে (শনিবার সকালে) খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। পরে আরো একজন সহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ জনে। এ ঘটনায় নিহত হয় ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ-সম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা।
বাকি তিনজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী জিরাত চাকমা মারা যায় গুলিতে। এছাড়াও এক বৃদ্ধ এলাকাবাসী সে সময় মারা যায়। এ ঘটনার জন্য জেএসএস (এমএন লারমা) এবং মুখোশ বাহিনী আখ্যায়িত করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে’ দায়ী করে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাক্ষাণ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপ।
১১ নভেম্বর ২০২৩ (সোমবার) রাতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে পতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে প্রসীতপস্থী ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা,খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা,পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিনসা ত্রিপুরাসহ ৪ জন নিহত হয়। পানছড়ি অনিলপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস সংস্কারসহ দু’গ্রুপকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি জেলার সাজেকের মাচালং ব্রীজ পাড়ায় সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর গুলিতে আশিষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমা নামের দুজন সক্রিয় সদস্য নিহত হয় বলে জানান সংগঠনটি।
এভাবে পাহাড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। আধিপত্যের লড়াইয়ে ঝড়ছে তাঁজা প্রাণ,বাড়ছে সংঘাত আর প্রাণঘাতি হানাহানি। গোলাগুলি,ব্রাশ ফায়ারে রক্তে রঞ্জিন হচ্ছে সবুজ পাহাড়। ভয়স্কর রূপ নিচ্ছে নীরব এই সবুজ উপত্যকা। পাহাড়ের সচেতন মহলের দাবী, একের পর হত্যাকাণ্ড,গোলাগুলি,খুনোখনি,সংঘাত আর দ্বন্দ্বে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এদিকে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
এ সকল ঘটনায় পার্বত্য এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পাহাড়ে আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আরো একাধিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে তারাও স্বশস্ত্র সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ভারী অস্ত্র প্রর্দশন করে পাহাড়ে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। মুলত আধিপত্য ধরে রাখতে পর পর আরো বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড পাহাড়ের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডকে আবার অনেকে আখ্যায়িত করেছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত। আবার অনেকের দাবী এ হত্যাকাণ্ড দ্বন্দ্ব আর স্বার্থের জালে অমানবিকতার।
প্রাণ হারানো পরিবার কি পাবে তাদের স্বজনদের? না পাবে বিচার এসব প্রশ্নের মধ্যেও সবুজে বেষ্টিত শান্তির পাহাড়ে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়ানো হত্যাকাণ্ড-হানাহানি সংঘাত বন্ধে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরতরা। যেখানে থাকবে না তাঁজা রক্তের গন্ধ, অস্ত্র,গুলির শব্দ,হানাহানি আর দ্বন্দ্ব। যে পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে এক খন্ড শান্তি-সম্প্রীতির নিবাস ভূমি।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply