নুরুল আলম:: খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার এক উপজাতী পরিবারের জায়গা ইসহাক নামে এক প্রভাবশালী মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাবেক সরকারি কর্মকর্তা জোর পূর্বক দখল ও প্রাণনাসের হুমকিসহ জালজালিয়াতীর মাধ্যমে জমি আত্মসাতের অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন গুইমারার হাফছড়িতে। ভুক্তভোগি রাংলা মারমাসহ এ সময় তার হাতে হয়রানীর শিকার ৯টি পরিবার।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর ২০২৩) সকালে গুইমারা উপজেলার ২নং হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রভাবশালী সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ইসহাকের বিরুদ্ধে ভূমি আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন তার অনিয়ম,প্রভাব বিস্তারের ফিরিস্থি তুলে ধরেন।
এসময় ভুক্তভোগি রাংলা মারমাসহ অন্যান্যরা অভিযোগ করে বলেন, ‘খাগড়াছড়ি গুইমারা উপজেলার ২২৭নং হাফছড়ি মৌজার হোল্ডিং নং-৬০/ক যাহার দাগ নং ৮৬ অর্ন্তভুক্ত নামজারী মামলা নং ৪২/৯৫ইং দলিল বন্ড নং ৭০/৯৭ইং ৪(চার) একর, নামজারী মামলা নং ১৬৩/১২ইং দলিল বন্ড নং ১৭৪/১২ইং ১ (এক) একর দুই নামে সর্বমোট ৫ একর ভূমি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসকের আদেশ মুলে রাংলা মারমার নিকট হতে ক্রয় সূত্রে মালিকানা নাভ করে জয়নাল আবেদীন ও মোঃ ইসহাক উদ্দিন।
তদন্ত কালে স্থানীয় সূত্রে উপস্থাপনকৃত কাগজপত্র মূলে দেখা যায় ক্রয় সূত্রে মালিকানা স্বত্বে মোঃ ইসহাক উদ্দিন গুইমারা উপজেলার ২২৭নং হাফছড়ি মৌজার ৬০/ক নং হোল্ডিং এ ৮৬ নং দাগের ৪ একর রেকর্ড ভুক্ত ৩য় শ্রেনীর জমি হইতে ২০/৪/১৬ইং তারিখে ০.৪০ শতক ৬-০১-১৯ইং তারিখে ৫শতক ২৮-৩-১৭ ইং তারিখে ০.২০ শতক সর্বমোট ০.৬৫ শতক একর ৩য় শ্রেনীর ভূমি বিক্রি করে মোঃ আব্দুল আলীম ও কুলসুম বিবির কাছে।
বিক্রিত ভুমির দলিলে উল্লেখিত চৌহর্দ্দীর সাথে দখলীয় চৌহর্দ্দীর মিল না থাকায় চৌহর্দ্দী সংশোধন করত ভূমি পরিমাপ করিয়া বুঝাইয়া দিবে বলিয়া আশ্বস্ত দেন। পরবর্তীতে সঠিক চৌহর্দ্দী মোতাবেক ভূমি চিহ্নিত করে পরিমাপের মাধ্যমে বুঝাইয়া দিতে তালবাহানা শুরু করে বিক্রেতা মোঃ ইসহাক।
এ বিষয়ে স্থানীয় হেডম্যান কার্বারী, চেয়ারম্যান মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিক বার অনুরোধ করলেও কখনো কর্ণপাত করেনি মোঃ ইসহাক। জানাযায়, মোঃ ইসহাকের বিক্রিত ভূমি নিয়ে চার পাশের সীমানা ও চৌহর্দ্দী নিয়ে বিরোধ রয়েছে, যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণনাশের ঘটনা।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার মিস্ত্রি পাড়া এলাকার মৃত মোঃ নুরুজ্জামানের ছেলে মোঃ ইসহাক ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা চাকরির শুরুতে তেমন কিছু না থাকলেও বর্তমানে সম্পদের পাহাড় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিপুল পরিমাণে জমিজমার মালিক। তার প্রতারণার শিকার জেলার অনেকেই।
মোঃ ইসহাকের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের হুমকি দেওয়ার ব্যপারেও কথা বলে এলাকার সাধারণ মানুষ। যেকোনো সময় ঘটতে পারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সহিংসতা, নষ্ট হতে পারে স্থানীয় পাহাড়ি বাঙ্গালির মেলবন্ধন। গত কিছু দিন আগে হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মোঃ ইসহাকের সাথে দেখা হয় ভূমি ক্রেতা মোঃ আব্দুল আলীমের ক্রয়কৃত ভুমি বুঝাইয়া দিতে বলতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে মোঃ আব্দুল আলীমের ক্রয়কৃত ভূমি বুঝিয়ে দিবে না বলে চুরান্ত সিদ্ধান্ত দেয় মোঃ ইসহাক। বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল জালিয়াতি করে মোঃ ইসহাক। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ৬ ও ৯ ধারায় মামলার খবর পাওয়া যায়, মামলা নং- ৫৬৭/২৩ স্থানীয় সূত্রে সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল জালিয়াতির কারণে র্দীঘ ৮বছরেও বিক্রিত ভূমি বুঝিয়ে দেয়নি মোঃ ইসহাক। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ও সম্প্রতী বজায় রাখতে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আইনের সহায়তায় দ্রুত মোঃ ইসহাককে গ্রেফতার পূর্বক বিচারের আওতায় আনার দাবী করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২নং হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংশে চৌধুরী ও ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ইউনুস হাওলাদার বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে। মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে জৈনক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা ক্রয় সূত্রে মালিক আমরা এক একরের মালিক, মোঃ ইসহাক উদ্দিন চার একরের মালিক আমার দাবি এক একর, মোঃ ইসহাক উদ্দিনের দাবি রাংলা মারমার দখলীয় সকল ভূমি, রাংলা মারমাসহ ক্রেতা ও প্রতিবেশীরা চায় সঠিক চৌহর্দ্দী মোতাবেক সকলে ভোগ দখলে থাকতে এতে বারংবার বাধা সৃষ্টি করে মোঃ ইসহাক উদ্দিন। এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন ক্রেতা আব্দুল আলীম, কুলসুম বিবি ও এলাকার লোকজন।
অভিযুক্ত মোঃ ইসহাক বলেন, ৩০বছর আগে রাংলা মারমার নিকট থেকে ৪ একর রের্কডীয় ভুমি ক্রয় করেছিলাম এবং খাস জায়গা ক্রয় করেছিলাম ৪ একর। এছাড়াও অপর এক ব্যক্তি থেকে ১একরসহ মোট ৯একর জায়গা ক্রয় করেছিলাম। একটি মহল আমার জায়গাটি আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে পায়তারা করছে এবং আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছে। আমিও আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply