কারও কারও দিন শুরু হয় জলের ধারায়। কেউবা দিন শেষের ক্লান্তি দূর করার প্রক্রিয়ায় রাখেন গোসল বা স্নান। আবার গরমের দিনে সকাল ও রাতে গোসল করার অভ্যাসও আছে অনেকের। সবকিছুর পরে প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করতে হবে—মন ও শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে।
স্থান-কাল-পাত্রভেদে গোসলের ধরন আলাদা হয়ে থাকে। এই যেমন তুরস্কের গোসলের পদ্ধতির (হাম্মাম) কথাই ধরুন। সেখানে প্রথমেই উত্তপ্ত ঘরে থাকা হয়, এরপর ঠান্ডা পানিতে শরীর পরিষ্কার করা হয়। শরীর মালিশ করানোর রীতিও রয়েছে। সবশেষে ঠান্ডা ঘরে অবস্থানের পালা। এই হলো টার্কিশ বাত।
আবার আমরা যে ধরনের বাথটাবের সঙ্গে পরিচিত, জাপানের ঐতিহ্যবাহী টাবগুলো সে রকম নয়। বর্গাকার বাক্সের মতো বিশেষ বাথটাবে বসে উষ্ণ পানিতে শরীর ভেজানো হয়; তবে তা অবশ্যই স্নানঘরে রাখা টুলে বসে শরীর ধুয়ে নেওয়ার পর। শরীরে কোনো ময়লা, এমনকি সাবান লেগে থাকা অবস্থায়ও এই বাথটাবে কেউ বসে না। গোসলের জন্য বিশেষ পোশাকও জাপানের ঐতিহ্য।
রাজধানীর আয়ুর্বেদা রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ সেন্টারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ শালিন ভারতী বলেন, ‘রোজকার জীবনই আয়ুর্বেদের বিষয়। আয়ুর্বেদ মতে, গোসলের কিছু বিধি রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্যই এসব নিয়মকানুন।’ তিনি গোসলের এমন কিছু পদ্ধতির কথা বলেছেন, যেগুলো এনে দেবে প্রশান্তি।
কিছু প্রস্তুতি
গোসলের আগে হালকাভাবে তেল মালিশ করা উচিত। তিল, নারকেল বা সরিষার তেল বেছে নিতে পারেন। মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে তেল মালিশ করে আরও পাঁচ-দশ মিনিট অপেক্ষার পর গোসল করুন। এতে ত্বক কোমল ও মসৃণ থাকে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, ক্লান্তি দূর হয়।
স্নান পর্ব
প্রশান্তির জন্য স্নানঘরের পরিবেশ সুন্দর হওয়া দরকার। সুঘ্রাণে আসে সতেজতা। সুগন্ধি ফুল রাখা যেতে পারে। এয়ার ফ্রেশনার বা বাথরুম ফ্রেশনারও কাজে দেবে। স্নানের শুরুতে পায়ে কুসুম গরম পানি দিন। এরপর মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালুন। সারা শরীরে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। গোসলের জন্য অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি নেবেন না। আর পানি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে।
পরিচ্ছন্নতার জন্য
সমপরিমাণ দই, বেসন, মসুর ডাল ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে শরীরে মালিশ করুন। এরপর দুই থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করা ভালো। তারপর ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন।
সাবানের তুলনায় প্রাকৃতিক স্ক্র্যাব ত্বকের জন্য বেশি ভালো। এ ধরনের প্যাক চুলে লাগাতে চাইলে এই প্যাকটির সঙ্গে শুধু টমেটো যোগ করে নিন। এ ছাড়া পুরো শরীর এবং মাথার ত্বকে মুলতানি মাটি মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। আবার হারবাল প্যাক কিনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
গোসলের পর
চুল হালকা মুছে ছেড়ে রাখুন গোসল করার পর। এবার বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। চুলের ওপর কাপড়ের কোনো কিছু পরতে হলে আগে চুল ভালোমতো শুকিয়ে নেবেন। তবে চুল ঝাড়া উচিত নয়। গোসলের পর মাথা একটু ভার ভার লাগলে পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে কিছুক্ষণ বসুন এবং এ সময়টাতে স্টিম (ধোঁয়া) কাজে লাগান। বাটিতে কয়লার আগুনে একটু লবণ দিতে পারেন। এরপর সাবধানে বাটি থেকে বেশ খানিকটা ওপরে হাত দিয়ে চুল ছড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে সহজেই চুল শুকিয়ে যায়। গোসলের পর নাকের ভেতর এক-দুই ফোঁটা তেল দিতে পারেন।
কখন গোসল
সকালে গোসল করা ভালো। আয়ুর্বেদ মতে, গোসলে দেরি করতে নেই। গরমের সময়টাতে প্রতিদিন দুই-তিনবার গোসল করা যায়। সকালে, দুপুরে খাবার আগে আর সারা দিনের কাজের শেষে বা রাতে ঘুমের আগে গোসল করতে পারেন। শীতের সময় শুধু সকালে গোসল করুন।
খাবারের পরপর গোসল করা ঠিক নয়, খাওয়াদাওয়ার অন্তত তিন-চার ঘণ্টা পর গোসল করুন। ব্যায়ামের পর গোসল করতে চাইলেও ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঘাম শুকিয়ে নিন। ঘেমে থাকা অবস্থায় গোসল করা ঠিক নয়।
সময় পেলে
রোজকার গোসলে হয়তো বেশি সময় পাওয়া যায় না। তবে সতেজতার জন্য পাঁচ-দশ মিনিটই যথেষ্ট। কখনো হয়তো আধঘণ্টা সময় নিয়ে গোসল করার সুযোগ পান। হাতে সময় থাকলে ঠিক কতক্ষণ গোসল করবেন, সেটি আপনার ইচ্ছা। বাথটাবে সুগন্ধি ফুল ছড়িয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে কিছুটা সময় থাকলে আরামবোধ করবেন। এ সময় স্নানঘরে হালকা বৈদ্যুতিক আলোও (ডিম লাইট) জ্বালাতে পারেন।
কখনো আবার পানিতে দুধ গুলে নিয়ে (মিল্ক বাথ) কিংবা মধু মিশিয়ে গোসল করতে পারেন। কথিত আছে, মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা মিল্ক বাথ নিতেন সৌন্দর্য ধরে রাখতে। দুধ ও মধুর গুণাগুণ সবারই জানা। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই-তিন দিন পাঁচ-দশ মিনিট করে স্টিম বাথ নিতে পারেন। যাঁরা কাজের জন্য বাইরে যান এবং মাঝেমধ্যে রোদে থাকেন, তাঁরা সপ্তাহে একবার স্পা করাতে পারেন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply